দীর্ঘ সময় জ্যামে আটকে আছি ঢাকার একটি ব্যস্ত সড়কে। ট্রাফিক সিগন্যাল। তবুও দশ পনেরো মিনিট হয়ে গেছে। গাড়ির যাত্রীরা বিরস মুখে চাওয়াচাওচি করছেন একে ওপরের দিকে। নগরজীবনের ক্লান্তিতে সবাই বাকহীন।
এরইমধ্যে গাড়িতে উঠলেন শুভ্র দাড়িওয়ালা একজন বৃদ্ধ। পরনে জোব্বা। মাথায় পাগড়ি। হাতে কিছু টাকা ও রশীদ বই।
গাড়িতে উঠেই লোকটি সুর দিয়ে বলতে শুরু করেছেন, "আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন, রাস্তার ওপাশে চলছে নির্মাণাধীন মসজিদের কাজ। আপনাদের দানের জরিয়ায় এক তলায় মানুষ আজ নামাজ পড়ছে। ভায়েরা আমার, মুসল্লীদের জায়গা হচ্ছে না। দ্বিতীয়তলার কাজ ধরা অত্যাবর্শক। দিয়া যান ভাই, যে যা পারেন দিয়া যান ভাই"
কয়েকজন দশ বিশ টাকা দিলেন। যাঁরা দান করেছেন, লোকটি তাঁদের প্রশংসা করছেন, এবং দোয়া করছেন। তবে সবার জন্য দোয়া করলেন না।
এভাবে পাঁচ ছয় মিনিট কালেকশনের পর গাড়ি থেকে নামলেন। আমি কিছুটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে দেখছিলাম লোকটি কোথায় যাচ্ছেন। কিন্তু বেশিক্ষণ লোকটিকে চোখে চোখে রাখতে পারি নি। লোকটি গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন। শত চেষ্টা সত্বেও আর দৃষ্টিতে আনতে পারিনি তাকে।
এদিকে এখনো সিগন্যাল ছাড়ে নি। অল্প সময়ে ছাড়বে বলেও মনে হলো না। অবস্থা দেখে মনে হলো আরও আধঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।
আমার দ্রুত গন্তব্যে যাওয়া জরুরি। তাই নেমে পড়লাম বাস থেকে। রিকশা বা বাইকে যেতে হবে বাকি পথ। রাস্তা পার হয়ে পাঠাও বাইকের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ একটি চায়ের দোকানে চোখ আটকে গেলো। দেখলাম, জোব্বা পড়া সেই লোকটি টাকা আর রশীদ বই পকেটে ঢুকিয়ে জোরে জোরে বিড়ি টানছেন। আশপাশের মানুষজন কিছুটা অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন।
ধোঁকার এই শহরের নিত্য খেলায় হতবাক হলাম। ইসলামে মসজিদ মাদরাসা স্থাপন করার ব্যপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে রাখবেন-তিরমিজি।
কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তিকে ইসলাম ঘৃণিত করে উপস্থাপন করেছেন। রাসুল্লাহর ৬৩ বছর জিন্দেগীতে এরকম ভিক্ষাবৃত্তির কোন নজির নেই। বরং কাফেরদেরকে জাকাত দিয়ে তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অসহায়দেরকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সাহায্য করেছেন। কিন্তু মসজিদ নির্মাণে এভাবে কালেকশনের কথা দেখা যায় নি।
এসব ধর্মব্যবসার কবল থেকে আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন৷ আমিন।
Admin