কলকাতায় দেহ ব্যবসা

By Admin Published in মনে যা ধরে August 16, 2022

কলকাতায় দেহ ব্যবসা

কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে একটা হোটেল ঠিক করলাম। সিঙ্গেল রুম। ভাড়া হাজার রুপি। বাংলা টাকায় বারোশো পঞ্চাশ টাকা। এ ধরণের রুম বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সাতশো হবে।

শিড়ি দিয়ে উপরে উঠার আগেই পাসপোর্ট জমা নিয়ে নিলো। পরবাসে একমাত্র সম্বল পাসপোর্ট। যারা পরবাসে আছেন বা কিছু সময়ের জন্যও ছিলেন, তারা জানেন পাসপোর্টটা কতগুরুত্বপূর্ণ।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, পাসপোর্ট নিচ্ছেন কেন? নিরাপত্তা জনিত কারণ দেখিয়ে বললো কিছু কাজ আছে। কিছুক্ষণ পর পেয়ে যাবেন। দাদাদের দেশে এসেছি, তর্ক করা ঠিক হবে না। দাদারা আমাদের তর্ক পছন্দ করে না। চুপচাপ উপরে গিয়ে স্নান শেষ করে গেঞ্জি পড়ে খেতে বের হলাম।

কোলকাতার নিউমার্কেট এরিয়ায় মুসলিমদের বসবাস বেশ ভালো। ট্যাক্সি থেকে নেমে হোটেলে আসার সময় কিছু "জোব্বা-জাব্বা" চোখে পড়েছিলো। দীর্ঘক্ষণ ঘুরাঘুরি করে পছন্দ মতো কোন হোটেল পেলাম না৷ রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাবে না। কারণ নিশ্চিত গরুর মাংস নেই। আর মুরগি খাওয়া ঠিক হবে না৷ মুরগি জবাই করে না। গলা টিপে মেরে তারপর খায়। এদিকে পেটে প্রচণ্ড খুূদা। শেষে একটা বন্দবস্ত হলো। ছোলা-বাটোরা পেলাম। পঁয়ত্রিশ রুপি। এই ছোলা-বাটোরা দেশে আড়াইশো টাকা মাত্র। স্বাদেও তুলনা হবে না কলকাতার সাথে।

পরবাসে আমি একা। খুব সাধারণভাবে এসেছি। খাবার খেয়ে হোটেলে আধঘণ্টার একটা ঘুম দিলাম। কিছুক্ষণ পর হোটেলের ম্যনেজার দরজায় টোকা দিলো, আমি দরজা খুলে বললাম, কী হয়েছে দাদা?
উনি বললেন, আমি মুসলিম চাইলে "ভাই" বলতে পারেন। আর কিছু লাগলে বলবেন।
আমি দরজা বন্ধ করতে করতে বললাম, আচ্ছা ঠিকাছে।
উনি বললেন, ইয়ে মানে,,,,,,,,,,
আমি বললাম, কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন।
হাসতে হাসতে বললেন, কিছু লাগবে?
এবার বুঝলাম বেটার মতলব। মাসির দালাল (এরচে বেশি ক্লিয়ার করতে পারবো না ভাইজান)
মাঝে মাঝে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় গোনাহ করি। কিন্তু তাই বলে চরিত্র নষ্ট করবো না। পরিস্কার জানিয়ে দিলাম, দরকার নাই ভাই।
কিছুটা হতাশ হয়ে দাদা( দুঃখিত,ভাই) চলে গেলেন

ঘুম থেকে উঠে গঙ্গা দেখতে বের হয়েছি। হোটেল থেকে আসার সময় হোটেলের মেনেজার পাসপোর্ট দিয়ে দিলেন। এখন আমি মোটামুটি নিরাপদ। ভারতের বৈধ পর্যটক। বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে এদেশে অসংখ্য অবৈধ পর্যটক আসে। কখনো কখনো দেশে অন্যায় করে এই দেশে এসে গা ঢাকা দেয়। আবার ভারতীয় অপরাধীরাও বাংলাদেশ ও নেপালে গিয়ে বসতি পাতে।

নিউমার্কেট থেকে দুইশো রুপিতে একটা সিএনজি ভাড়া করলাম। এদিকটাতে ভালো সুবিধা আছে। পরিবহনের ভাড়া কম।

ঢাকা শহরে হিজড়াদের হাতে অনেকবার নির্যাতিত হয়েছি। এখন দেখি কোলকাতায়ও হিজড়াদের বেশ ক্ষমতা। আমার ট্যাক্সি থামিয়ে বললো, টাকা দাও।
আমি বললাম, মাসি, আমার কাছে তো টাকা নেই। শুধু ট্যাক্সি ভাড়াটা আছে।
তাদের মধ্যে একজন বললো, ট্যাক্সিতে ঘোরাফেরা করো,আবার বলছো টাকা নেই! দাও দেরি করো না। টাকা দাও।
প্যান্টের পকেট থেকে দশ রুপি বার করে দিলাম। ওরা ছুঁয়েও দেখলো না। বললো, কমপক্ষে দুইশো রুপি দিতে হবে।
বাধ্য হয়ে মানিব্যাগ থেকে দুইশো টাকা দিয়ে দিলাম।

গঙ্গার সবচে ভালো ঘাট হলো "প্রিন্স ঘাট"। খুব সুন্দর করে সাজানো। সুন্দর সুন্দর নৌকা। ল্যামপোস্টের বাতিতে ঝলমল করছে চারিদিক। চোখ জুড়ানো কিছু ভাস্কর্য। নানান আইটেমের খাবার। সবকিছুতেই যেন সুন্দরে সুন্দরে মিতালী। কিন্তু সবচে অসুন্দর ও কুৎসিত হলো গঙ্গার জল। আমাদের দেশের বুড়িগঙ্গার পানিও বোধহয় এরচে অনেক পরিষ্কার। অবাক হওয়ার বিষয় হলো, এই গঙ্গার পানির স্পর্শ পাওয়ার জন্য বিলেত থেকেও মানুষ আসে। একটি মেয়ের সাথে দেখা হলো ফুচকা খেতে গিয়ে। সে আমেরিকান। শুধু মাত্র গঙ্গাজলের ঘ্রাণ নিতেই নাকি আমেরিকা থেকে এসেছে। তার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পর সে জিজ্ঞেস করলো, তেমাদের দেশে যে টেরোরিস্ট হামলা হয়েছিল সেটার কী খবর?
আমি বললাম, এধরনের দু'একটা ঘটনা ঘটেছে। তারপর আর কিছু হয় নি। এখন শান্ত পরিবেশ।
সে বললো, ও তাই নাকি?
আমি বললাম, জ্বি।
সে আমাকে তার সাথে নৌকায় উঠার আমন্ত্রণ জানালো। কিন্তু এই দুর্গন্ধযুক্ত নদীতে যাওয়ার আমার আগ্রহ নেই। তাই তাকে বললাম, তুমি যাও আমার ইচ্ছে নেই।