আমাদের গ্রাম 

By Admin Published in আর্টিকেল August 16, 2022

আমাদের গ্রাম 

শহরতলির পাথুরে রাস্তা শেষে আমাদের গ্রাম। চারিদিকে সবুজের ছড়াছরি। কখনো ব্রীহির হালকা সবুজ রঙে আলোকিত হয়ে থাকে চারিধার, কখনো সোনালী আঁশের গাড়োরঙে আলোকিত চারিদিক। মাঝে মাঝে বিশাল জায়গা জুড়ে কাশবন। কাশফুল দেখে মনে হয় খেলা করছে শুভ্রতা। 

     ছোট ছোট পাহাড়ের বুকে কখনো দেখা মেলে কিছু বাগানের । গোলাপ বাগান। গোলাপের কাটাযুক্ত গাছের ডালে ডালে নানারঙের গোলাপ ফুল। কখনো লাল-গোলাপ ভালোবাসা নিয়ে মনের জানালায় উঁকি দেয়। আবার কখনো সাদা-গোলাপ শুদ্ধতার বার্তা নিয়ে হাজির হয়। গোলাপ ফুলের প্রতিটি পাপড়ি যেন কাছে ডাকে। একটু ছুঁয়ে দেখার আহ্বানে। বলে ,ছুঁয়ে দেখো! আমি কাঁটা দেবো না।  

     পথ দিয়ে হেঁটে যায় পথিক । ইট-পাথরহীন মটরগাড়ীমুক্ত আমাদের গ্রামের রাস্তার একপাশে সারি সারি প্রকাণ্ডগাছ অনবরত ছাঁয়া দিচ্ছে পথিককে। গাছের ডালে পাখি। চড়ুই আর শালিকের সংখ্যা বেশি হলেও মাছখেকো মাছরাঙাও কম নয়। চড়ুই দুষ্টুমিতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু মাছরাঙা তার তীক্ষ্ণদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে পানির দিকে। কখন মিলবে মাছের দেখা । 

    রাস্তার আরেক পাশে বয়ে চলছে অথৈ জল আর স্বচ্ছ পানির ছোট নদী। সে নদীর বুক চিড়ে নৌকা বয়ে যায়। ইঞ্জিনমুক্ত নৌকা। গৃহপালিত সাদা রঙের হাঁস মাঝে মাঝে ডানা মেলে। যেন উড়তে চায়। সাথে সাথে কক কক করে ডাকে। হাঁসের ছেট ছোট বাচ্চাগুলোও সুর মিলায় । স্বচ্ছ নীল রঙের পানিতে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য।

    গ্রামের বিশাল অংশে ধানক্ষেত। ক্ষেতে মাঝারি সাইজের বহুব্রীহি। গাছের মাঝখানে ধান দেখে মনে হয়, সবুজ রঙের ছোট গাছগুলো স্বর্ণ মুড়িয়ে রেখেছে। মনে হয় ছোট দানাগুলো স্বর্ণ। স্বর্ণের চেয়ে কমই বা কিসের? গ্রামের কৃষকের ঘামে ঝরা ছোট ছোট দানাগুলোই তো দেশের সব মানুষের অন্য। বেঁচে থাকার উপায়।  

    একদম স্বপ্নের মতো। এই সৌন্দর্য যদি কোন ক্যামেরাম্যান ছবি তুলে সৌন্দর্যের পরিমান বুঝাতে চায় ,তবে সে ব্যর্থ হবে। কোন শিল্পী যদি যত্ন করে তুলি দিয়ে ক্যানভাসে আঁকতে চায়, তাহলে অকৃতকার্য হবে। যদি কোন গল্পকার নানান ভঙিমায় প্রকাশ করে সেও একশো তে একশো পাবে না।

কারণ এর কোনটাই যথাযথ সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পরিপূর্ণ সক্ষম নয়। সবগুলোতেই কমতি আছে। 

     সবচে বড়বিষয় হলো, একেক ঋতুতে একেক রুপ ধারণ করে আমাদের গ্রাম। বর্ষায় চারিদিকে জল থৈ থৈ। তখন চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় নৌকা। গৃষ্মকালে কুঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে। কাছের দৃশ্য অদৃশ্য মনে হয়। আবার সেই কুয়াঁশার অবস্থান যখন গোলাপের পাপড়ি হয়, তখনকার সৌন্দর্য কেবল দেখে বুঝা সম্ভব, বলে বুঝানো যাবে না। আর,,,,,,,,,,  চারিদিকে মৌসুমী ফলের পাকা গন্ধে ঘুম আসে না।

Admin
Admin
Biochemist